Friday, 12 October 2012

রহস্যে ঘেরা ব্লাকহোল


রহস্যে ঘেরা ব্লাকহোল
হাফিজ তাহমিদ হাসান।

মানব সভ্যতার উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান বিজ্ঞানের বিজ্ঞানের কল্যাণেই মানুষ একের পর এক অজানা বিষয় গুলোকে জয় করছে অজানা বিষয় গুলোর অন্তর্নিহিত রহস্য উদঘাটন করছে. বিজ্ঞানের প্রধান কাজ গুলোর একটি হচ্ছে অজানা বিষয় গুলোর রহস্য মানুষের সামনে তুলে ধরা কিন্তু বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগেও এই মহাবিশ্বের অনেক বিষয়গুলোর  রহস্য এখনো উন্মোচিত হয় নিযেসকল বিষয়ে  বিজ্ঞান এখনো অন্ধকারে রয়েছে তাদের মধ্যে একটি হল ব্লাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর। কি এই ব্লাকহোল? কেমন এর গঠন প্রণালী? কি ঘটছে এর ভিতর? এর মধ্যে পতিত বস্তু ও শক্তির শেষ পরিণতই বা কি? এরকম হাজারটা প্রশ্নের কোন সঠিক জবাব বিজ্ঞানের কাছে নেই। এ ব্যাপারে বিজ্ঞান বড়ই অসহায়। কারন ব্লাকহোলকে কখনই দেখা যায়না। শুধু এর চার পাশের Even horizon থেকে মুক্ত X-ray এর অস্তিত্ত থেকেই এর অবস্থান নিশ্চিত করা যায়। যারা অহংকার করে দাবী করেন যে, মানুষ চাইলে সকল বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং সকল কিছুই করতে পারে। মানুষ সব ধরনের সীমাবদ্ধতাকে জয় করতে পারে সুতরাং মানুষ সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বেব্লাকহোল তাদের এই দাবীকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করেছে। আসলে মানুষ অনেক কিছুই অর্জন করতে পারে তবে সকল কিছুই নয়। মানুষের অবশ্যই সীমাবদ্ধতা আছে এবং চিরকালই তা থাকবে। মানুষ কখনোই এই সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারবেনা। তাইতো আধুনা বিজ্ঞান ব্লাকহোল সম্পর্কে তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলছে- what is inside a black hole? it is impossible to tell. you will never be able to see inside a black hole and you can never know. তাই না এর ভিতরের দৃশ্য দেখা যাবে না এর প্রকৃত রহস্য জানা যাবে। যেখানে মানুষ ব্লাকহোল সহ স্রষ্টার অসংখ্য সৃষ্টিকে দেখার সামর্থ্য রাখেনা এবং এর রহস্য উদঘাটনেও সমর্থ নয় সেখানে কি করে ঐ রহস্যময় সৃষ্টি গুলোর স্রষ্টাকে না দেখার অজুহাতে অস্বীকার করতে পারে? এগুলোতো আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়।
এবার আসা যাক ব্লাকহোল প্রসঙ্গে। এই মহাজাগতিক বস্তুটির নাম ব্লাকহোল হওয়ার কারন হল, Absolutely no information passes out of black hole and that is why it is blackঅর্থাৎ- ‘প্রকৃতপক্ষে এর ভিতর থেকে কোন প্রকার তথ্যই লাভ করা যায় না। এ কারনেই এটি চির আন্ধকার’ব্লাকহোল এর ভয়ঙ্কর রুপ এবং অকল্পনীয় ধ্বংস ক্ষমতা মানুষের জানামত সকল প্রকার Adventureকেও হার মানায়। প্রতিটি গ্যালাক্সীতেই ব্লাকহোল এর অস্তিত্ব আছে। এক একটি ব্লাকহোলের আয়তন আমাদের স্বৈরজগত থেকেও বড় হতে পারে। বিজ্ঞানিদের ধারনা ব্লাকহোল জন্ম নেয় নক্ষরগুলোর ধ্বংসাবশেষ থেকে। এ নক্ষরগুলো সাধারনত সূর্যের তুলনায় ৩০ থেকে ১০০ গুন বড় হয়ে থাকে। ঐ নক্ষরগুলো যখন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে চলে যায় তখন ব্লাকহোল এর সৃষ্টি হয়। তবে শর্ত হচ্ছে ব্লাকহোল সৃষ্টির জন্য নক্ষরটি সূর্যের তুলনায় কমপক্ষে ৩০ গুন বড় হতে হবে। নতুবা তা বিস্ফোরণ এর মাধ্যমে নিউট্রনস্টার বা পালসার তৈরি করবে। ব্লাকহোল তৈরি করতে পারবেনা। যেহেতু নক্ষত্রের ধ্বংসের মাধ্যমে ব্লাকহোল সৃষ্টি হয় তাই একে নক্ষত্রের মৃত্যুকুপ বা নক্ষর পতনের স্থান বলা হয়। ব্লাকহোল তার আশেপাশের সকল বস্তুকে প্রচণ্ড বেগে টেনে নিয়ে আসে। তারপর প্রচণ্ড ঘনায়নের মাধ্যমে এর নাম নিশানাও মুছে ফেলে। এমনকি সবচেয়ে গতিশীল বস্তু আলোও এর হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে না। বিজ্ঞানিদের ধারণা আমাদের বিশাল পৃথিবীকে এই ব্লাকহোল এর মধ্যে ছেড়ে দিলে তা এক সেকেন্ডের মধ্যে এক সেন্টিমিটার ব্যাসের একটি ছোট বিন্দুতে পরিণত হবে। কি ভয়ঙ্কর এর ক্ষমতা! কোন কিছু এর ধারে কাছে আসলে আর রেহাই নেই, নির্ঘাত ধ্বংস। কোন কিছুই এর হাত থেকে বাঁচতে পারেনা। ভাবতেও অবাক লাগে আলো পর্যন্ত এর হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে পারেনা। এমন অবিশ্বাস্য ভয়ঙ্কর সর্বনাশী মৃত্যুকূপের অভ্যন্তরে আসলেই কি ঘটে চলেছে তা মানুষের বোধগম্যের সম্পূর্ণ বাইরে। ১৮শ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশ বিজ্ঞানি ‘জন মিচেল’ এবং ফরাসি বিজ্ঞানি ‘লা-প্লাস’ সর্বপ্রথম মহাকাশে ব্লাকহোল এর মত বস্তু থাকতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেন। যদিও এই অভিমতটি সেদিন বিজ্ঞান বিশ্ব‌ের মোটেই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। ১৯৩৫ সালে ভারতীয় বিজ্ঞানি অধ্যাপক সুব্রামানীয়ম চন্দ্রশেখর ইংল্যান্ড এর এক বিজ্ঞান সভায় ব্লাকহোলের পক্ষে দৃঢ় ভাবে বক্তব্য তুলে ধরেন। তখনো তা প্রমানিত হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে স্যাটেলাইট ‘উহুরু’ (UROHO‌) মহাকাশে X-ray এর সন্ধান করতে গিয়ে ব্লাকহোল এর সন্ধান লাভ করে। মূলত ১৯৭০ সালেই প্রথম বিজ্ঞান কতিক ব্লাকহোল এর অস্তিত্ব প্রমানিত হয়।
অবাক করার মত তথ্য হচ্ছে আজ থেকে ১৪০০শ বছর পূর্বে অন্ধকার, অনুন্নত, কুসংস্কার আচ্ছন্ন যুগে একটি গ্রন্থে এই মহাবিস্ময়কর ব্লাকহোল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। অবাক হচ্ছেন! আজ থেকে মাত্র দেড়শত বছর আগেও যখন বিজ্ঞানিরা ব্লাকহোল‌ সম্পর্কে কল্পনাও করতে পারতেন না সেখানে আজ হতে ১৪০০ বছর পূর্বে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বর মূর্খতার যুগে কিভাবে একটি গ্রন্থে এই বিস্ময়কর ব্লাকহোল সম্পর্কে আলোচনা করা হলযেখানে আজও বিজ্ঞানিরা ব্লাকহোল সম্পর্কে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। বিশ্বাস হচ্ছে না? তবে পবিত্র কুরআনের সূরা ওয়াকেয়ার ৭৫ নং আয়াত পাঠ করেই দেখুন। যার অর্থ হল- শপথ সে পতন স্থানের যেখানে নক্ষত্র সমূহ ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ এখানে ব্লাকহোল এর শপথ নেয়া হয়েছে। মহাকাশে যে এমন কিছু মহাজাগতিক বস্তু আছে যারা নক্ষত্রকে ধ্বংস করতে পারে, অর্থাৎ মহাকাশে অবস্থিত তারকা মৃত্যুকূপের অস্তিত্ব এবং এর কাজ সম্পর্কে কুরআনই সর্বপ্রথম ধারণা দিয়েছে। বিজ্ঞান পরবর্তীতে আবিস্কার করে তা প্রমাণ করেছে মাত্র। ১৪০০ বছর পূর্বে কুরআনে বর্ণিত তারকা মৃত্যুকুপ বা নক্ষত্র ধ্বংসস্থান এবং বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত ব্লাকহোল এর মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি? আজ থেকে মাত্র দেড়শত বছর পূর্বেও যেখানে মানুষের কল্পনার রাজ্যও ব্লাকহোল পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারেনি সেখানে আজ থেকে দেড়হাজার বছর পূর্বে কুরআন ব্লাকহোল সম্পর্কে আলোচনা করে প্রমাণ করেছে যে, কুরআনই স্রষ্টা প্রদত্ত একমাত্র অবিকৃত ঐশী বাণী। তাই কুরআন এর সাথে সাথে কুরআনের রচয়ীতা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সত্যতা দিবালকের ন্যায় হয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কার গুলো যেন নিরবে বলে চলছে যে, কুরআন ও বিজ্ঞান একই উৎস থেকে নির্গত। তাই কুরআন অবতীর্ণকারী মহান আল্লাহকে অস্বীকার করা যেন বিজ্ঞানকেই অস্বীকার করার শামিল